শেরপুর জেলায় চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে বোরো চাল-ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। বুধবার বিকাল ৩টায় শেরপুর সদর এলএসডি খাদ্যগুদামে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান কেনার মাধ্যমে বোরো সংগ্রহ অভিযান আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হুইপ আতিউর রহমান আতিক। এদিন সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের কৃষক আনার আলীর (৫৫) নিকট থেকে ১৫০ কেজি ধান ক্রয় করা হয়।
শেরপুর জেলায় এবার কৃষকের অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধিত কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি ধান কেনা হচ্ছে। বোরো ধান কেনা শুরু হলেও চালকল মালিকদের সাথে খাদ্য বিভাগের চুক্তি সম্পাদন না হওয়ায় এখনও সরকারিভাবে বোরো চাল কেনা শুরু হয়নি। তবে চালকল মালিকদের সাথে খাদ্য বিভাগের চুক্তি সম্পাদন কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার।
বোরো সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধনকালে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, জলো খাদ্য নয়িন্ত্রক মো. ফরহাদ খন্দকার, শেরপুর চেম্বারের সভাপতি আসাদুজ্জামান রৌশন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন, জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন সহ খাদ্য বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বোরো সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি বলেন, শেরপুর জেলার উৎপাদিত-উৎকৃষ্ট মানের চালের সারাদেশে ব্যাপক সুখ্যাতি রয়েছে। শেরপুরের চাল এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সরকার খাদ্য উৎপাদন ও সংগ্রহে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। তাই দেশে খাদ্য মজুদ নিশ্চিত করার জন্য এবার মৌসুমের শুরুতেই বোরো সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বচ্ছতার সাথে এবার গুদামে বোরো ধান ও চাউল ক্রয় করা হবে। কোনো অবস্থায় সিন্ডিকেট চক্রের হাতে কোনো সাধারণ কৃষক জিম্মি না হয় সেজন্য তিনি খাদ্য কর্মকর্তাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান। তাছাড়া নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খাদ্যগুদামে ভালো মানের চাল সরবরাহ করার জন্য শেরপুর জেলার চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ফরহাদ খন্দকার বলেন, শেরপুর জেলায় এবার ২৪ হাজার ৫২৫ মে. টন বোরো সিদ্ধ চাল ও ১২ হাজার ৯৬৭ মে.টন বোরো ধান মজুত করণ করা হবে। সরকার কেজি প্রতি চাল ৪০ টাকা এবং ধান ২৭ টাকা দরে মূল্য নির্ধারণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, এবার কৃষকেরা অনলাইনে কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে জেলার ৫টি উপজেলায় সরকারী খাদ্য গুদামে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অ্যাপস-এর মাধ্যমে প্রথম ধাপে জেলায় প্রায় ৫ হাজার কৃষক তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে কৃষক নিবন্ধন কাজ চলমান রয়েছে। চাল ক্রয়ের জন্য চালকল মালিকদের সাথে চুক্তি সম্পাদন কাজ চলছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত থাকব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শেরপুর খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোহিত কুমার দে জানান, জেলায় এবার ৯০ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ১৫ হাজার ৭০০ মে.টন ধান। তবে অনুকূল আবহাওয়া আর ধান গাছের ফলন দেখে যা মনে হয়েছে, তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় সোয়া ৬ লাখ মে. টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। এবার ধানকাটা শুরুর মধ্যেই সরকারিভাবে সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ায় কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আমরা মনে করছি।