আছিম জিসি ভরাডুবা ঘাটাইল আরএইচডি তমালতল পাকা সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তের নামের সরকারি নীতিমালা অনুসরণ না করে বিপুল সংখক সরকারি মূল্যবান গাছ উপড়ে ফেলেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরিবেশের এ ধ্বংস যজ্ঞ দেখার কেউ ছিল না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়কের দুই পাশে নয়নাভিরাম সারিবদ্ধ সবুজ গাছগুলো ভ্যাকু দিয়ে উপরে ফেলা হয়। গাছ গুলোর বয়স প্রায় ১৭ বছর। প্রতিটি গাছের মূল্য হবে ৩৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা। কোনো কোনো গাছের মূল্য আরো বেশি হবে। এভাবে মূল্যবান গাছগুলো নষ্ট করায় সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট ও পরিবেশ হয়েছে ভারসাম্যহীন।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ভরডুবা ঘাটাইল তমালতল সড়কের দুই গ্রুপে ৯ কিলোমিটরা পাকা সড়ক প্রশস্ত ও সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। প্রায় ১২ কোটি টাকার কাজের মধ্যে ‘তাহের অ্যান্ড সন্স লাল মাহমুদ জেভি’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩৮৫০ মিটার, ও ‘এল,আর কনট্রাকশন’ ৫১৫০ মিটার কাজ পায়। ১২ ফুট পাকা সড়কটি প্রশস্ত করে করা হয় ১৮ ফুট। গত ৫ মাস যাবত কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি। শুরুতেই সড়কে দুই পাশে থাকা আকাশমণি, শিশু, কড়ই, রেইনট্রি মেহগুনি, তাল ও খেজুর গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মহামূল্যবান গাছ ভ্যাকু মেশিন দিয়ে উপড়ে ফেলে দেয়। মাসের পর মাস সড়কের পাশে পরে থাকায় বড় বড়সহ বেশির ভাগ গাছ রাতের আঁধারে চুরি হয়ে গেছে। কিছু গাছের মূল কাণ্ড পড়ে থাকলেও কোনো ডালপালা নেই। শুকনো গাছগুলোতে উইপোকা বাসা বাঁধছে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর ৯ কিলোমিটার সড়কে দুই পাশে ৬ থেকে ৭ ফুট দূরুত্ব আকাশমণি, শিশু, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করে। প্রতি ৫০০ মিটার সড়কের দুই পাশে গাছের চার পরিচর্যা করার জন্য ২ জন করে নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। নারী শ্রমিকরা একাধারে তিন বছর গাছগুলো পরিচর্যা করেন।
নারী শ্রমিকদের গাছের পরিচর্যার তদারকির দায়িত্ব ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর, ফুলবাড়িয়া। সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করার দরপত্র আহ্বান করলেও সড়কের দুই পাশে লাখ লাখ টাকা মূল্যের সরকারি গাছগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে কৌশল অবলম্বন করেন। যে কারণে সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো লাখ লাখ টাকা মূল্যের গাছগুলো উপড়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা অনুসরণ না করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় ফুলবাড়িয়া এলজিইডি অফিস।
সরেজমিনে আছিম ভরডুবা ঘাটাইল তমালতলা সড়কের বাঁশদি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সোয়াইতপুর বাজার পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে দেড় শতাধিক গাছ উপড়ে আছে। গাছের গুড়ালিসহ মূলকাণ্ড রয়েছে। ডালাপালসহ অন্যান্য কাণ্ডগুলো নেই। বাঁশদি গ্রামে জামান ডাক্তারের মৎস্য ফিসারি সংলগ্ন সড়কের পাশে বিশাল কয়েকটি আকাশমনি, রেইনট্রি ও শিশু গাছ উপড়ে পানিতে ফেলা রেখেছে। এ ছাড়া কিছু দূর পর পর সড়কের দুই পাশে গাছ পরে আছে। এতে করে সড়কের পাশে কৃষকের জমি অনেক ধান নষ্ট হয়েছে। সড়কের গাছগুলো এভাবে উপড়ে ফেলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় স্থানীয়রা ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গাছের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে বা সরকারের উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে সড়কের পাশের গাছ কাটা যাবে। সেক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। সড়কের পাশে গাছ কাটতে হলে এলজিইডি অফিস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠির মাধ্যমে জানাবেন। সেই চিঠির আলোকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বনবিভাগকে গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য চিঠি লিখবে। মূল্য নির্ধারণ হওয়ার পর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি এবং কাটতে হবে।
বাঁশদি গ্রামের আরিফ হোসেন জানান, রাস্তার কাজ করতে গিয়ে অসংখ্য মূল্যবান গাছ ভ্যাকু মেশিন দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়। দীর্ঘদিন পরে থাকায় অনেক গাছ রাতের আঁধারে চুরি হয়ে গেছে।
নাম না বলা শর্তে এক বন কর্মকর্তা জানান, আছিম ভরডুবা ঘাটাইল তমালতল সড়কের পাশের গাছগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যে কারণে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সড়কের পাশের সরকারি গাছ থাকলে অবশ্যই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাটতে হবে।
তাহের অ্যান্ড সন্স লাল মাহমুদ জেভি’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. লাল মাহমুদ সরকার বলেন, সড়ক প্রশস্ত করার সময় কয়েকটি মরা গাছ ভ্যাকু দিয়ে মাটি কাটার সময় উপড়ে গেছে। এখানে কিছু করার নেই যেহেতু সড়ক প্রশস্ত হয়ে ১২ ফুটের স্থলে ১৮ ফুট হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহবুব মোর্শেদ বলেন, আছিম জিসি ভরাডুবা ঘাটাইল আরএইচডি তমালতল পাকা সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তের কাজ শুরু হওয়ার পর এখানে যোগদান করেছি। কয়েকটি গাছ সড়কের পাশে পরে আছে শুনেছি। খোঁজ নিয়ে এখন নিলামে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল ছিদ্দিক জানান, এ বিষয়ে এলজিইডি অফিস আমাকে কিছু জানায়নি।