ধান চুরির অপবাদ দিয়ে এক ব্যক্তিকে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে যুবকের বিরুদ্ধে। মারধরের পর ওই বৃদ্ধকে চোর অপবাদ দিয়ে উল্টো থানায় এনে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত যুবককে আটক করে।
বুধবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের বারোগরি পূর্বহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার ওই ব্যক্তির নাম আব্দুল বারেক (৫৫)। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বনহাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে তিনি। আর অভিযুক্ত মো. মাসুদ মিয়া (৩৮) বারোগরি পূর্বহাটি গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার ওই ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল বারেক গত কয়েক বছর ধরে বোরো ধান কাটার মৌসুমে মদনের গোবিন্দশ্রী এলাকায় এসে হাওরাঞ্চলের পড়ায় পাড়ায় ধান ভিক্ষা করেন। এ বছর তিনি গোবিন্দশ্রী গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ঝুমন মিয়ার একটি পরিত্যক্ত ঘরে বসবাস করে ভিক্ষা করছিলেন।
বুধবার দুপুরে বারোগরি পূর্বহাটি এলাকায় মোক্তার হোসেনের ছেলে খাইরুল মিয়া তার বিরুদ্ধে খলা থেকে ধান চুরির অভিযোগ তোলেন। কিন্তু ভিক্ষুক আব্দুল বারেক চুরির অভিযোগ অস্বীকার করলে তাকে একটি বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। পরে খাইরুলের ছোট ভাই মাসুদ মিয়াসহ কয়েকজন এসে ওই ব্যক্তিকে মারধর করেন। শেষে মাসুদ তার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালান। পরে দুই বস্তা ধান চুরির অপবাদ দিয়ে সন্ধ্যায় তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের নজরে আসে। পরে তার নির্দেশে রাত দুইটার দিকে পুলিশ মাসুদ মিয়াকে আটক করে এবং আব্দুল বারেককে হাসপাতালে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার সকালে বারেককে আবার থানায় এনে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়।
পুলিশ হেফাজতে থাকায় অভিযুক্ত মাসুদ মিয়া ও নির্যাতনের শিকার বারেকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে মাসুদের বড় ভাই খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আব্দুল বারেক আমার দুই বস্তা ধান চুরি করেছে। তাকে হালকা শাসন করা হয়েছিল। পরে পুলিশে খবর দিয়ে দুই বস্তা ধানসহ তাকে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
এ ব্যাপারে আব্দুল বারেকের ছেলে আজিজুল মিয়া (২৪) মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমি ঢাহা গার্মেন্সে কাম করি। আমার আব্বা চার পাঁচ দিন আগে মদনের গোবিন্দশ্রী একটি বাড়িতে থাকইক্কা ধান সাহায্য তুলে। অহন আমার আব্বারে তারা চুরির অপবাদ দিয়া বাইন্দা নির্যাতন করছে। আবার উল্টা মামলা করছে। আমরা মামলা করবাম কিবা, টেহা পয়সা নাই। পুলিশ মামলা নিত চাইতাছে না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, আব্দুল বারেককে মারধরের ঘটনায় মাসুদ মিয়াকে আটক করা হয়েছে। বারেক এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তাকে হাসপাতাল থেকে থানায় এনে রাখা হয়েছে। বারেকের বিরুদ্ধে মাসুদের ভাই থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী বলেন, আব্দুল বারেককে নির্যাতনের ভিডিওটি পুলিশের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। বারেকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হলেও তিনি চাইলে তাকে যারা নির্যাতন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।