কিশোরগঞ্জের হাওরে বোরো মৌসুমে ধান কাটার ধুম পড়েছে। হাজার হাজার কৃষক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন, ধান কাটা, পরিবহন, মাড়াই আর ঝাড়াইয়ের কাজে। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সময়মতো ধানকাটা শেষ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় হাওরের কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ২২ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৭৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হবে। কিন্তু এরই মধ্যে অতি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে করে সুরমা, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে হাওরের নিচু এলাকার বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, ১৭ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত আসাম ও মেঘালয়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হবে বলে আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস রয়েছে। এতে করে দেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুরসহ হাওরের কয়েকটি জেলায় সুরমা, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। ফলে হাওরের নিচু এলাকার আধাপাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
এ অবস্থায় হাওরের পাকা ধান দ্রুত কেটে ফেলতে জেলা প্রশাসক ও কৃষি বিভাগকে জানানো হয়েছে। তবে বৃষ্টি হলেও আগাম বন্যা হবে না বলেও মনে করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।
অপরদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, অতিবৃষ্টিতে হাওরের নিচু জমিতে পানি উঠতে পারে। এ পরিস্থিতিতে হাওরের কৃষকদের নিচু জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া পাওয়ার থ্রেসার ছাড়াও ১০৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ২০টি রিপার মেসিন দিয়ে হাওরের পাকা ধান কাটা হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল আলম জানান, হাওরে ধানকাটা পুরোপুরি শুরু হতে আরও অনেকটা সময় লাগবে। তবে সময় মতো ধানকাটা শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানান এ কৃষিবিদ।
খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা কিশোরগঞ্জে প্রতি বছর বোরো ধানকাটা মৌসুমে আগাম বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকায় দিন কাটে কৃষকদের। আগাম বন্যার হাত থেকে হাওরের ফসল রক্ষা করতে জেলার ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামসহ কয়েকটি উপজেলায় নির্মাণ করা হয়েছে ৫৪টি নতুন ফসলরক্ষা বাঁধ। আগের বাঁধগুলো সংস্কারের পাশাপাশি নতুন বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় অনেকটা আশংকামুক্ত হাওরের কৃষকরা।
এবার কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৫০০ হেক্টরই হাওরে। এসব ধান থেকে ৭ লাখ ১১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগাম বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ধানকাটা শেষ করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন হাওরবাসী।