টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সড়ক পাকা করার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নে যোগীরকোফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ছলিমনগর ভরপাড়া স্লুইস গেইট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার কাজে এলাকাবাসী এই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে।
জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে উপজেলার ত্রিমোহন খেয়াঘাট-হাঁটুভাঙা জিসি সড়কের যোগীরকোফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ছলিমনগর ভরপাড়া স্লুইস গেইট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ঢাকার এনএইচবি ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায়।
রাস্তায় বেড কেটে ১০ ইঞ্চি বালি ফিলিং, ৬ ইঞ্চি খোয়া ও বালি মিশ্রিত (সাব বেইজ) ফিলিং, ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় খোয়া (মেকাডাম) ও ধাপে ধাপে রোলিং করার কথা। পরিমাণের চেয়ে কম বালি ফিলিং ও নিম্নমানের ইটের খোয়া ফেলে নামমাত্র রোলার দিয়ে রোলিং করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রকৌশল অফিসের কাজটি সঠিকভাবে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব থাকলেও তাঁরা ঠিকমতো তদারকি করছেন না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে।
এদিকে, সড়কটিতে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় স্থানীয়রা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেন। এরপরও ঠিকাদারের লোকজন কাজ চলমান রাখে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
যোগীরকোফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিম্নমানের সাব বেইচ করায় গ্রামবাসী কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সরজমিন এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
যোগীরকোফা ও ছলিমনগর গ্রামের কয়েকজন জানান, এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় এমপি মো. একাব্বর হোসেন রাস্তাটি পাকা করার ব্যবস্থা করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় অফিসের সহযোগিতায় রাস্তাটি পাকাকরণ কাজে সিডিউলের নিয়ম নীতি না মেনে নিম্নমানের কাজ করছেন। এ কাজে স্থানীয় লোকজন বাঁধা দিলেও ঠিকাদারের লোকজন কাজ চলমান রেখেছেন। এছাড়া যোগীরকোফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিম্নমানের সাব বেইচ করায় গ্রামবাসী কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে তাঁরা জানান।
তদারকির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের ভাতিজা মো. মামুন বলেন, ‘স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা জোরপূর্বক নিম্নমানের কিছু খোয়া সরবরাহ করেছিল।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনএইচবি ট্রেডার্সের মালিক নাজমুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, স্থানীয় লোকজন খোয়া সরবরাহ করেছিলো। নিম্নমানের খোয়া অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের নকশাকার উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামসুদ্দিন মিয়া বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা ঠিকাদারকে নিম্নমানের খোয়া সরবরাহ করেন। নিম্নমানের ওই খোয়া ব্যবহারে ঠিকাদারের লোকজনকে নিষেধ করা হয়েছিল। ঠিকাদারের লোকজন নিষেধ উপেক্ষা করে তা ব্যবহার করেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ঠিকাদারকে চাপে ফেলে নিম্নমানের খোয়া ফেলা হচ্ছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর নিম্নমানের খোয়া অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’