বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের ১৪২৮ বঙ্গাব্দের কার্যনির্বাহী নতুন কমিটি গঠন নিয়ে কোন্দল তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশ শনিবার সকালে এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রকিবুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সংগঠনটির একাংশ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. রকিবুল ইসলাম বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে না পারায় বিগত কয়েক বছর যাবত সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক কোটারি করে অসংখ্য কমিটিতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে এবং স্বেচ্ছাচারীতা চালিয়ে যাচ্ছে যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের গঠণতন্ত্রের পরিপন্থী। উচ্চ মহলের মদদপুষ্ট হয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সুপরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের ঐক্য বিনষ্ট করছে।
তিনি আরো বলেন, ১৪২৮ বঙ্গাব্দের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য গত ২০ মার্চ গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিষয় নির্বাচনী কমিটি প্রস্তাব করা হয়। পরে ২৮ মার্চ সাধারণ সভায় তা উপস্থাপিত হয়। সাধারণ সভায় (১৩ এপ্রিল) প্রস্তাবিত কমিটি উপস্থাপিত হলে তা সাধারণ সদস্যদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। সমালোচনা সত্ত্বেও সভাপতির অনুমতি ছাড়াই সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বিষয় নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এম এ সালামকে দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ কমিটি ঘোষণা করান। এ সময় সভাপতি কথা বলতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক কথা বলার সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সাধারণ সম্পাদক কার্যনির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে দিয়ে সভার সমাপনী ঘোষণা করান।
বিষয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা কিছু পরিবর্তন এনে কমিটির তালিকা তৈরি করেছিলাম। কিন্তু ওই দিন সভাপতিকে কথা বলতে না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানিয়ে তাদের মনোপুত কমিটির অনুমোদন দেওয়া খুবই গর্হিত কাজ হয়েছে যা অতীতে কখনো হয়নি। সভায় সভাপতি উপস্থিত থাকার পরও এমনটি করার উদ্দেশ্য ছিল পকেট কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা কুক্ষিগত করা।
গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, সভায় সভাপতির সাথে যে কাজটি হয়েছে সেটি খুবই অন্যায়। সভাপতিকে কথা বলতে না দেওয়া গঠণতন্ত্র বিরোধী। কয়েকজন শিক্ষক মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা দখল নিতেই এমন কমিটি করেছে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, সভাপতিকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি এমনটি সত্য নয়। উনি (সভাপতি) আসলে সভার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। কিছু শিক্ষক অসৌজন্যম‚লক আচরণ ও হট্টোগোল শুরু করে দিলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। পরে সিনিয়র শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে ও নিদিষ্ট সময়ে সভা শেষ করার জন্য ওই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র মেনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সভাপতিত্বে সভা পরিচালিত করা হয়। ওই সভার রেকর্ডিং চাইলে তিনি বলেন, সেখানে সভাপতির পক্ষের কিছু শিক্ষক এমন কিছু অশালীন শব্দচয়ন করেছেন যা শিক্ষকদের সম্মানে প্রকাশ করা ঠিক হবেনা।
সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রকিবুল ইসলাম খান বলেন, নতুন বিষয় কমিটি করে আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের গঠনতন্ত্র মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া হবে।
বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, তাদের অভিযোগ বস্তুনিষ্ঠ নয়। তাদের অভিযোগগুলো সুশীল সমাজেও গ্রহণযোগ্য নয়। সহনশীলতা বজায় রেখে এবং পরস্পরকে দোষারোপ না করে প্রত্যেক সংগঠনের ঐক্য ধরে রাখা উচিত।