জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া ও ফিরে আসার জন্য পুলিশের বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে আলাদা মুভমেন্ট পাস নিতে হবে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া আট দিনের লকডাউন চলাকালে এই পাস নিতে হবে। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের এই পাস লাগবে না। তাঁদের নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রই মুভমেন্ট পাস হিসেবে গণ্য করা হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে।
লকডাউনে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিশেষ এই অ্যাপের উদ্বোধন করে মঙ্গলবার। মুভমেন্ট পাস নামের অ্যাপটি উদ্বোধনের পর প্রতি মিনিটে ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়লেও সন্ধ্যার দিকে তা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার। প্রথম ঘণ্টায় আবেদন জমা পড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের মহাপরদির্শক (আইজিপি) অ্যাপটির উদ্বোধন করেন। দুপুরের দিকে অতিরিক্ত চাপ থাকায় মুভমেন্ট পাসের (https://movementpass.police.gov.bd) এই ওয়েব ঠিকানায় ঢোকা যাচ্ছিল না বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পরে সার্ভারের সংখ্যা আরও বাড়ালে সন্ধ্যার দিকে তা স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সারা দেশ থেকে পুলিশের মুভমেন্ট পাসের জন্য ৬ লাখ আবেদন করা হয়। এর মধ্যে ৬০ হাজার আবেদনে পূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩০ হাজার আবেদনকারী মুভমেন্ট পাস পেয়েছেন।
লকডাউনে বাসা থেকে নিতান্ত প্রয়োজনে কাউকে বের হতে হলে মুভমেন্ট পাসের জন্য ওপরের ওয়েব ঠিকানায় ঢুকে আবেদন করতে হবে। শুরুতে একটি সক্রিয় মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে। আবেদনকারী কোথা থেকে কোথায় যাবেন, তা জানতে চাওয়া হবে। সেই সব তথ্য ধাপে ধাপে দিতে হবে। এরপর আবেদনকারীর একটি ছবি আপলোড করে আবেদন জমা (সাবমিট) দিতে হবে। এরপর ফিরতি মেইল বা বার্তা আবেদনকারীকে পাঠানো হবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট নেওয়া যাবে। প্রিন্ট কপিটিই মুভমেন্ট পাস হিসেবে গণ্য করা হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মাল্টিমিডিয়া ও পাবলিসিটি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঘর থেকে বের হওয়া ও ফেরত আসার জন্য আলাদা মুভমেন্ট পাস নিতে হবে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে অ্যাপটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বুধবার থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া লকডাউনে কাউকে রাস্তায় দেখতে চাই না।’
লকডাউন পালনে সবার সহযোগিতা চেয়ে আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা বুধবার রাস্তাঘাট এবং বাইরে বিনা প্রয়োজনে কাউকে দেখতে চাই না। আমরা চাপ প্রয়োগের চেয়ে নিজেদের উদ্যোগেই এই দায়িত্ব পালন করব। এসব না মানলে সমগ্র বাংলাদেশকে আইসোলেশনে নিতে হবে।’
অ্যাপের উদ্বোধনীতে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘সীমিত কারণে বের হওয়া লাগতে পারে। তাঁরা মুভমেন্ট পাস নেবেন। রাস্তাঘাটে কোনো আড্ডা দেবেন না। বিভিন্ন সড়কে, মোড়ে আড্ডা দেবেন না। দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তরুণেরা কেউ বের হবেন না। বের হতে হলে অবশ্যই দ্রুত ঘরে ফিরতে হবে।’ গাড়ি বের করার বিষয়েও নিরুৎসাহিত করে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মুভমেন্ট পাস নেবেন।’
করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা কোনো প্রাণহানি চাই না। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রধান উপায় হচ্ছে ব্যক্তিগত সচেতনতা।
আমাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। তা ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া—এসব বিধি আমাদের মনোযোগ ও আন্তরিকতা দিয়ে মানতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মুভমেন্ট পাস নিতেই হবে, এমন না। আমরা কাউকে বাধ্য করছি না। এখানে আইনগত কোনো বিষয় নেই।’ তবে পাস ছাড়া কেউ বের হলে তিনি পুলিশের জেরার মুখে পড়বেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আইজিপি।
প্রান্তিক মানুষের কী হবে, যাঁদের ইন্টারনেট ব্যবস্থা নেই, স্মার্টফোন নেই, তাঁরা কীভাবে এই পাস সংগ্রহ করবেন—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘দেশে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউ না পারেন, তাহলে প্রতিবেশীর সাহায্য নিতে পারেন।