1. najmush71@gmail.com : admin : Najmush Shakeer
  2. munir2002lubnan@gmail.com : Munirul Huq Khan : Munirul Huq Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ

ইসলামপুরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, মাটি ও বালুর গাড়ি চলাচলে ধুলোবালিতে ফল-ফসল নষ্টসহ অতিষ্ঠ জনজীবন। অন্যদিকে ভাটাগুলোর ইট তৈরিতে ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলি জমিগুলো ক্ষতির মুখে পড়ছে।

জানা গেছে, নীতিমালা লঙ্ঘন করে লোকালয় ও কৃষিজমিতে উপজেলার ঢেংগারগড় বটতলা সংলগ্ন মেসার্স এমআরবি ব্রিকস, নবাব ব্রিকস, গঙ্গাপাড়া গ্রামে জনবসতিতে মিলি ব্রিকস, পাথর্শী ইউনিয়নের মোজাআটা, পশ্চিম মোজাআটা, মুকশিমলা, রৌহারকান্দা গ্রামের ফসলি ধানি জমিতে পৌরসভা ভবনসংলগ্ন সওদাগর ব্রিকস, দক্ষিণ দরিয়াবাদ গ্রামসংলগ্ন হাতিজা গ্রাম, পাঁচবাড়িয়া গঙ্গাপাড়া এলাকা ও চর গোয়ালীনি ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম সংলগ্ন ব্রিকস এলাকায় ১১টি ইটভাটায় দীর্ঘদিন ধরে পাকা চিমনি নির্মাণ করে ইট উৎপাদন করছে।

ঢেংগারগড় বটতলা সংলগ্ন মেসার্স এমআরবি ব্রিকস ও নবাব ব্রিকস সড়ক দখলে নিয়ে ইট উৎপাদনসহ তাদের মাটি ও বালুর গাড়ি চলাচলে সাধারণ মানুষের চলাচল ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, পৌরসভা ভবন, শেখ হাসিনা হেলথ টেকনোলজি, মডেল মসজিদ, বাজার, গোরস্থানসহ জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসংলগ্ন জায়গায় সওদাগর ব্রিকস ইট ভাটা স্থাপনে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

ইট উৎপাদনে ফসলি জমির মাটির উপরিভাগ কেটে নেওয়া অব্যহত থাকলে জমিগুলো বন্ধ্যা জমিতে পরিণত হওয়াসহ বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহিত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় পরিণত হবে। এই জমিগুলো চলতি রবি মৌসুমে সরিষা চাষ না করায় তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গাছ ও কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি সাধনসহ কালো ধোঁয়া আর ধুলোবালির বিরূপ প্রভাবে জমির আবাদ নষ্ট হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে।

প্রজাতন্ত্র আইন ১৯৫০ এর অধীনে ১৯৯০ সালের ইস্যুকৃত সার্কুলারে কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষেধ রয়েছে। সেই সাথে জনবসতির তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এ ছাড়াও আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা; সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর; সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেড, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক হইতে কমপক্ষে অর্ধ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কোনো ইটভাটা স্থাপন করতে পারবেন না। কিন্তু উপজেলার ইটভাটাগুলোর অধিকাংশ মালিক এই আইন অমান্য করে ভাটা স্থাপন করেছেন।

ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ এর নীতিমালা লঙ্ঘন করে ইটভাটাগুলো নির্মাণ করায় একদিকে যেমন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তেমনি কাঠ পোড়ানো ও চিমনি ব্যবহারের ফলে এলাকার পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণসহ আশপাশের বনজ ও ফলদ গাছ উজাড় হচ্ছে। দিন দিন ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার এই প্রবণতা বেড়েই চলার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ফসলি জমির উর্বরাশক্তিও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এ ছাড়াও ফসলি জমির উপরিস্তর কেটে নেওয়ার ফলে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, পটাশ, জিংক, সালফার ক্যালসিয়ামসহ অর্গানিক বা জৈব উৎপাদনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কালো ধোঁয়া ও ভাটার গাড়ির প্রতিনিয়ত মাটি ও বালু নিয়ে বেপরোয়া চলাচলে সড়কগুলোতে পথচারীদের আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। খোলামেলাভাবে মাটি ও বালির গাড়িগুলো যাতায়াতে ধুলোবালিতে মানুষের বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিসহ অনেকের চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফসলি জমির মাঠে ইটভাটার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তারা প্রশাসনের নিকট দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজুয়ানূল ইসলাম জানান, ফসলি জমির মাঠে ইটভাটার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ইটভাটার বিরূপ প্রভাবে ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ার বিষয়গুলো একাধিকবার জেনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এম আবু তাহের জানান, করোনার মহামারিতে খোলামেলাভাবে মাটি ও বালুর গাড়ি চলাচলে ধুলোবালিতে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, এলার্জিসহ দিন দিন নানা রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাজহারুল ইসলাম জানান, অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণে পরিবেশ ও ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়। দ্রুতই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩ আঙ্গর টিভি