কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া ভুক্তভোগী পরিবার। ওই স্কুলছাত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে পরিবারটি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ পরিবারের। উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের চরপাড়াতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, স্কুলছাত্রী সন্ধ্যায় তার নিজ ঘরে বসে পড়ছিল। এমন সময় প্রতিবেশী আব্দুস সালামের ছেলে মো. আমিন মিয়া গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই স্কুলছাত্রীর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তের পক্ষের লোকেরা বিষয়টি নিয়ে মামলা না করতে স্কুলছাত্রীর পরিবারকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। ঘটনার তিন দিন পর স্থানীয় মেম্বার হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রভাবশালীদের নিয়ে সালিস বসিয়ে এক লাখ টাকায় আপস-মীমাংসা করা হয়। এক সপ্তাহ পর মেয়ের বাবার নামে এক বিঘা জমি ইজারা রেখে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই মেয়ের পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে অভিযুক্তরা। বাড়ির উঠানের মাঝ বরাবর টিনের বেড়া দিয়ে মেয়ের পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ ছাড়াও ইজারা জমিতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে গত বছরের ১৪ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে মামলা করেন।
মামলায় মো. আমিন মিয়া ও তার বড় ভাই মো.আব্দুস সামাদকে আসামি করা হয়। এ কারণে বিবাদী পক্ষের লোকজন বাদী পক্ষের লোকজনকে ভয়ভীতিসহ নানারকম হুমকি দেয়। মামলাটি মীমাংসার জন্য স্থানীয় মেম্বার হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ফের কয়েক দফা সালিস বৈঠক হয়। একপর্যায়ে কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে মামলাটি গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর মীমাংসা করা হয়। মীমাংসার পর ফের মেয়ে পক্ষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে অভিযুক্ত আমিন মিয়া ও তার বড় ভাই আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল স্কুলছাত্রীর পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে।
এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর চাচা বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকুন্দিয়ায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ বাদী পক্ষের।
মামলার বাদী বলেন, অভিযুক্তরা আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুরসহ আমাদের মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও হুমকি দিচ্ছে, আমরা বাড়িতে গেলে মেরে ফেলবে। তাই আমরা দেড় মাস ধরে বাড়িতে যেতে পারছি না। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না পুলিশ।
মামলার আসামি আব্দুস সামাদ বলেন, ‘বাড়িতে আসতে আমরা তাদের নিষেধ করিনি। এরপরও কেন তারা বাড়িতে আসছে না এটি তাদের বিষয়’। তবে তিনি বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
পাকুন্দিয়া থানার এসআই মো. মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমি অভিযোগকারীর বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করেছি। কিন্তু কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি। বাদীর পক্ষে কেউ মুখ খোলেনি। তাই অভিযোগটি রেকর্ড করা যায়নি।