রোববারের (৪ এপ্রিল) কালবৈশাখী ঝড় ও গরম বাতাসে কিশোরগঞ্জে হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসেব বলছে, প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে এই ঝড়ে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে দাবি কৃষকদের।
আর কিছু দিন পরেই এই ধান সোনালী রঙ ধারণের পর্যায়ে ছিল। এমন সময় সবুজ ধানের গাছ ধূসর হয়ে পড়ায় কৃষকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
রোববার বিকেলে মাঠের সবুজ ধান ক্ষেতের সতেজতা দেখে বাড়ি গেছেন ইটনা হাওরের কৃষক আলাউদ্দিন। কিন্তু সোমবার সকালে ক্ষেতের আইলে গিয়েই দেখেন তার সবুজ স্বপ্নগুলো ধূসর হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ধানের গোছা হাতে নিয়ে ক্ষেতের আইলেই বসে পড়েন তিনি। জানালেন, ধার-দেনা করে ৭০ কাটা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন। এ জমিকে ঘিরেই ছিল তার সম্ভাবনার হাতছানি। কিন্তু এমন অবস্থায় তিনি চোখে অন্ধকার দেখছেন।
কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি ধার-দেনা কীভাবে শোধ করব? আমার সংসার চলবে কী করে? আর কিছু দিন সময় পেলেই ধান গাছগুলো পরিপক্ক হয়ে যেত।’
রোববার সন্ধ্যা থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড় ও গরম বাতাস। এতে ফ্লাওয়ারিং স্টেজে থাকা বিআর-২৯ জাতের ধানের ছড়া ফেটে ভেতরের সাদা তরল দুধ শুকিয়ে গেছে। সাদা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে ধানের গাছ।
তিন বছর আগে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই আকস্মিক ঝড়ে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিশোরগঞ্জের কৃষকের মাথায় হাত।
চামড়া বন্দর এলাকার কৃষক মো. কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘হঠাৎ করে গরম হাওয়ায় সবুজ ধানের গাছ আস্তে আস্তে ধূসর হয়ে পড়েছে। পরের দিন রোদ ওঠার পর আমরা বিষয়টি টের পাই।’
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পরাগায়ন পর্যায়ে ৩০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় ধানের পূর্ণতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ের সময় ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় প্রচণ্ড বেগে বাতাস বয়ে যাওয়ায় জেলার ১৩টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জাননিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল আলম।
তিনি জানান, গরম হওয়ায় ঠিক কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যাবে আরও দু-তিন দিন পর। তবে প্রাথমিকভাবে কৃষি বিভাগের হিসেবে জেলার ১৩টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমি দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির ধান শতভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যগুলো ২৭.২ ভাগ বিনষ্ট হয়েছে।
কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসেবে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৫৯৫ হেক্টর, হোসেনপুর ২৩০ হেক্টর, পাকুন্দিয়ায় ৭৪০ হেক্টর, কটিয়াধীতে ২৩০৩ হেক্টর, করিমগঞ্জে ৩৮০০ হেক্টর, তাড়াইলে ১৩৯৫ হেক্টর, ইটনায় ৪৭৫০ হেক্টর, মিঠামইনে ১৯৪০ হেক্টর, নিকলীতে ২৬৩৫ হেক্টর, অষ্টগ্রামে ৪৪০ হেক্টর, বাজিতপুরে ২৪০ হেক্টর, কুলিয়ারচরে ১১২ হেক্টর ও ভৈরবে ২৯০ হেক্টর জমির বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এবার জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন চাল।