নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। অনেকটা বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা পুকুরের পানি ব্যবহার করছেন।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বলছে, অসংখ্য সাব-মার্সিবল পাম্প স্থাপন ও ফসলি জমিতে সেচ ও গভীর নলকূপগুলোর জন্যই মূলত পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর টিউবওয়েলগুলোতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলার চণ্ডীগড় ইউনিয়নের সাতাশি, ফেচিয়া, মধুয়াকোণা, মউ, সদর ইউনিয়ন, কুল্লাগড়া, বাকলজোড়া, কাকৈরগড়া, গাওকান্দিয়া ও বিরিশিরি ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও দীর্ঘক্ষণ টিউবওয়েলে মিলছে না পানি। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ বাধ্য হয়েই পুকুরের ময়লা পানি ফুটিয়ে পান করছেন এবং ব্যবহার করছেন দৈনন্দিন কাজেও। অনেকেই আবার কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে কাঁধে কিংবা মাথায় করে নিয়ে আসছেন বিশুদ্ধ পানি। গত দুই মাস ধরে পানি সংকটে কষ্ট করে আসছেন এ উপজেলার মানুষ।
দুর্গাপুর পৌর শহরের ৭ ওয়ার্ডের নলজোড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, পানির সংকট এখন গ্রামের পর গ্রামে। আগে এত খাবার পানি সংকট হয়নি। এ বছর গ্রামের প্রতিটি টিউবওয়েলই অকেজো। টিউবওয়েলের হাতল ধরে অনেকক্ষণ চাপাচাপি করলেও পানি আসছে না। পানির জন্য আমরা খুব কষ্ট করছি। আমাদের তো গভীর নলকূপ স্থাপনের সামর্থ্য নেই। তাই এখন পুকুরের পানিতেই জীবন বাঁচাতে হচ্ছে।
দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম বিজয়পুরের সাবত্রী রিছিল, ইমারান মিয়া ও শহিদুল ইসলাম বলেন, মাস খানেক ধরে কোনো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। এমনকি ধানের জমিতে দেয়ার মেশিনেও পানি উঠছে না। পুকুর, ডোবার পানি গরম করে খাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা নানান রোগ-বালাইয়ে পড়ব।
একই উপজেলার কাঁকড়াকান্দা গ্রামের হুমায়ূন কবীর, আমিনূল ইসলাম ও সিরাজুল করিম বলেন, এ বছরের মতো আর কখনো পানি সংকটে পড়িনি।
স্থানীয় উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্যমতে, দুর্গাপুরে সরকারি হিসাবে সাড়ে ৫শ’র মতো গভীর নলকূপ রয়েছে। ৬নং গভীর তারা পাম্প ৪৯২টি। যা ৬-৭শ ফুট গভীর। গভীর তারা পাম্প রয়েছে ৩০ টি। যা ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ ফুট গভীর। এছাড়া সীমান্ত এলকায় ১৬৫টি রিংওয়েল(কুয়া) রয়েছে। অসংখ্য সাব-মার্সিবল পাম্প স্থাপন ও ফসলি জমিতে সেচ ও গভীর নলকূপগুলোর জন্যই মূলত পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর টিউবওয়েলগুলোতে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সংকট সমস্যার সমাধানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছেন বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করা ২৫০ ফুট গভীর নলকূপগুলো থেকে পানি উঠছে না। সরকারিভাবে স্থাপন করা গভীর তারা পাম্পগুলোতে পানি উঠছে। দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। যে কারণে টিউবওয়েলগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। টিউবওয়েলে পানি না আসার বিষয়টি লোকজন আমাদের জানাচ্ছেন। আমরা বিষয়টি উপর মহলে অবহিত করেছি। বিশুদ্ধ পানি সংকট সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আহসান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় টিওবয়েলে পানি উঠছে না। খাবার পানি সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের সাথে কথা বলা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।