করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আবারও লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর প্রভাবে ময়মনসিংহের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। তবে দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর মেছুয়া বাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
জিলাপি পট্রির মেসার্স উসমান ট্রেডার্স মালিক বাবুল বলেন, লকডাউনের প্রভাবে চাল বিক্রি বেড়েছে। তবে, অচিরেই নতুন চাল বাজারে আসবে। যে কারণে চালের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নাই। গত সপ্তাহের তুলনায় দাম স্থিতিশীল আছে।
তিনি জানান, প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৬২ টাকা, আটাশ ৫২-৫৩ টাকা, ঊনত্রিশ চাল ৫২-৫৪ টাকা, ঊনপঞ্চাশ ৫০-৫১ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী মের্সাস কাওসার রাইস মিল আব্দুস সালাম বলেন, ‘সামনে রমজান মাস তারপর আবার নতুন মাস পড়ছে। তাই চালের বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে। তবে লকডাউনের প্রভাব বাজারে তেমন পড়েনি।’
তিনি জানান, ইরি মোটা চাল ৪৪-৪৬, স্বর্ণা ৪৬-৪৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে চলতি সপ্তাহে চালের দাম।
মেছুয়া বাজারের মেসার্স নুরুল আমিন স্টোর নুরুল আমিন জানান, মাসকলাইয়ের ডাল কেজি প্রতি ১২৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১১৫ টাকা, হাইব্রিড মসুর ডাল ৭০ টাকা, খেসারির ডাল ৯০ টাকা, মটরশুঁটি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনি প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, ছোলা ৫ টাকা কমে ৭০ টাকায়, মুগডাল ১৩৫ টাকায়।
কথা হয় বাজার করতে আসা তিন শিক্ষিকার সঙ্গে। তাদের একজন রাজিয়া পারভিন মায়া বলেন, ‘সময় না থাকায় আমরা প্রতি মাসের বাজার একসঙ্গেই করে ফেলি। তবে লকডাউন দীর্ঘদিনের হলে প্রস্তুতি অবশ্যই নিতে হবে।’
মেছুয়া বাজারের মেসার্স বাপ্পী এন্টারপ্রাইজের মালিক বাপ্পী বলেন, ‘লকডাউনে বেচাকেনার চাপ বেড়েছে। তবে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম সর্বোচ্চ। খোলা সয়াবিন তেল ১৩০ টাকা লিটার। এছাড়া বোতলজাত প্রতি লিটার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
বাজার করতে আসা নারায়ন তালুকদার বলেন, ‘সরকার লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে। কতদিন এই লকডাউন থাকে তা তো বলা যায় না। এছাড়া দাম বাড়ারও সম্ভাবনা আছে। তাই বাজার বেশি বেশি করেই করছি।’
মেঁছুয়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী হুমায়ুন বলেন, ‘লকডাউনে বেচাকেনা কিছুটা বাড়ছে। তবে কাঁচাবাজারের দাম বাড়েনি। ছোট বেগুন কেজি প্রতি ৪০, বরবটি ৮০, শসা ৪০, গাজর ২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা কেজি। লেবু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে, এক হালি ৪০ টাকা।
বাজারে হাসের ডিম ৪০ টাকা, ফার্মের মুরগির ডিম ৩০ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৫০ টাকা, রসুন বড় ৬০ টাকা দের বিক্রি হচ্ছে।
ওই বাজারের খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম জানান, পটল ৪০ টাকা, শিম ৩০ টাকা, সজনা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, শিম ৩০ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা, দেশি কুমড়া ৩০ টাকা, ছোট আলু ২০ টাকা, বড় আলু ১৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা, রসুন ছোট ১২০ টাকা, শুকনো মরিচ ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ওই বাজারের মুড়ির ব্যবসায়ী তপন কুমার পাল বলেন, খোলা মুড়ি ৭০ টাকা ও প্যাকেট মুড়ি ৮০ টাকায় কেজি।
এদিকে নিম্নমানের খেজুর কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, মাঝারি মানের খেজুর ৪০০ টাকায়, আর ভালো মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।
মেঁছুয়া বাজারের মাংস বিক্রেতা রাজা কুরায়সী জানান, সবদিক থেকেই বাজারে ক্রেতার চাপ বেশি। খাসির মাংস ৮২০ টাকা, গরুর মাংস ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রিপন পল্ট্রি হাউসের মালিক সারোয়ার হোসেন জানান, ব্রয়লার মুরগি ১৪৫ টাকা, পাকিস্তানি, সোনালী ও কক মুরগী ৩০০ টাকা কেজি, দেশি মুরগি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মেছুয়া বাজারের মাছ ইউসুফ বলেন, ‘গত লকডাউনে মানুষের ভেতরে একটা ভয় ছিল, এবার তা নেই। তবে বাজারে ক্রেতা বেশি থাকলেও মাছের দাম বাড়েনি।’
তিনি জানান, মিরর কার্প, রুই ৩০০ টাকা কেজি কারফু (মাঝারি) ২০০ টাকা, বড় কারফু ২৫০-২৬০ টাকা, ছোট সিলভার কার্প ১৫০ টাকা, কাতল (বড়) ২৮০ টাকা, টেংরা ২৫০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রতি কেজি বড় ইলিশ ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।