বিদ্যুৎ লাইন সংস্কার করতে কর্তাদের কথায় সঞ্চালন লাইনের খুঁটিতে ওঠেন দুই লাইনম্যান। বিশ্বাস ছিল কাজ শেষ না করে ওই লাইন সচল হবে না। কিন্তু কর্তাদের এই বিশ্বাসেই কাল হলো লাইনম্যানদের। কাজ চলাকালীন সময়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ সচল হলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ যায় একজনের অন্যজন অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকলেও গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যু শয্যায়।
মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সকালে এ ধরনের ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জ জেলার জেলখানার মোড় এলাকায়।
ওই দুই লাইনম্যান হচ্ছেন মো. শফিকুল ইসলাম (৩২) ও লালন মিয়া (৩৫)। শফিকুলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজতপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামে ও লালনের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। দুজনই ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলার ওই এলাকায় ৩৩ কেভির লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে পুরো অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। এ অবস্থায় নান্দাইলের দুই লাইনম্যানসহ কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যু সমিতির লোকজন ওই গ্রিডে কর্মব্যস্ত থাকেন। এর মধ্যে সদর গ্রিডের বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে লাইনম্যানদের কাজ করতে নির্দেশ দেন দায়িত্বরত এজিএম। অন্যান্য সময়ের মধ্য এই নির্দেশের ওপর বিশ্বাস করেই দুই লাইনম্যান নির্দ্বিধায় খুঁটিকে উঠে কাজে মগ্ন থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শী লাইনম্যান মনির হোসেন জানান, কাজ করার সময় সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ খুঁটির একটি লাইনে বিদ্যুৎ সচল হয়ে যায়। এতে ওই তারের স্পর্শে লাইনম্যান শফিকুল ইসলাম বিদ্যুতায়িত হয়ে সঞ্চালন লাইনের খুঁটিতেই ঝুলে যায়। এ সময় তার শরীর পুড়ে আঙ্গার হয়ে যায়। অন্যদিকে আরেক লাইনম্যান হঠাৎ ছিটকে নিচে পড়ে প্রানে বেঁচে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ক্রেন দিয়ে শফিকুলের লাশ নামানো হয়।
জানা যায়, শফিকুলের স্ত্রী প্রথম সন্তান সম্ভবা। স্বামীর মৃত্যুর খবরকে কোনোভাবেই মানতে পারছে না। বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। এ দৃশ্য দেখে অনেকেই কেঁদে ফেলেন।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে নিহত শফিকুলের বড় ভাই আব্দুল সালাম জানান, এইভাবে তো মৃত্যু হতে পারে না। কার গাফিলতিতে বন্ধ লাইনে বিদ্যুতায়িত হলো তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জিএম উত্তম কুমার সাহা জানান, ওই লাইনটির নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে ছিলেন সদর গ্রিডের এজিএম রাজি আল হাসান ও ইসমাইল হোসেন নামে একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। তবে কিভাবে কি হলো তা দেখার জন্য একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে সদর গ্রেডের এজিমের মোবাইল নাম্বারে একাধিক ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে বন্ধ করেন ফোনটি।
কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।