নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাস করা আদিবাসী নারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করেই চলছে তাদের জীবন জীবিকা। এ কষ্ট থেকে পরিত্রাণের জন্য সীমান্তবর্তী হাট চান পাহাড়ি আদিবাসীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এপারে বাংলাদেশের উত্তর ভবানীপুর গ্রাম, ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা উপ-শহর। দুই দেশের সীমান্তসংলগ্ন গ্রাম দুইটির আশপাশে দীর্ঘদিন কোনো বর্ডার হাট না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে যেতে হতো দূরের কোনো গঞ্জে বা শহরে।
এ দুর্ভোগের কারণে এসব এলাকার সীমান্তে চোরাচালানের ঘটনাও বেড়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিক হারে। কিন্তু সে দুর্ভোগ বা চোরাচালানের দৃশ্যপট এখন সবই পাল্টে গেছে।
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শাকসবজি, মাছ, মুরগী, বুট, কাঁচা সুপারি, সিগারেট আর ওপার থেকে বিস্কুট, চিনি, ডাল, লবণ, কসমেটিক ও জিরা আনা নেয়ার কাজ করে কোন রকম দিন পার করছে স্থানীয় আদিবাসী নারীরা।
আদিবাসী নারী প্রেমলা হাজং বলেন, ‘মলা তো গুরিব মানুষ, উন্য বিবুসা কুরিবো ট্যাংকা কুবায় পায়’ (আমরা গরীব মানুষ, জীবন জীবিকার জন্য অন্য ব্যবসা করতে টাকা কোথায় পাবো) মাঝে মধ্যে খুব কষ্টে পড়তে হয় আমাদের, ওপারের দোকানিরা সুযোগ বুঝে আমাদের মালগুলো বাকিতে রাখতে চায়।
আমরা একদিন কাজ না করলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। বেচাকেনা শেষে কোন দিন ৫০০, কোন দিন ৪০০ টাকা লাভ হয়। এদিয়েই কোন রকম চলে আমাদের সংসার।
মাটি কাটার কাজে নারী শ্রমিকদের চেয়ে পুরুষদের চাহিদা বেশি থাকায় আমরা এ ব্যবসা করছি। মালামাল পারাপারের জন্য কাউকে কোন টাকা দিতে হয় কিনা জিজ্ঞাসা করলে জানান, আগে টুকরি প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তে ১০০ টাকা দিতে হতো, এখন ওদের চোখ ফাঁকি দিয়েই আমাদের জীবিকা নির্বাহ করছি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজিবি বলেন, আমরা অত্যন্ত সতর্কভাবে সীমান্তে টহল দিচ্ছি, আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় আদিবাসীরা জীবন জীবিকার তাগিদে যে কাজটি করে খাচ্ছে, তা দোষের কিছু নয়। তবে কোন প্রকার মাদক পেলে কাউকে ছাড় দেই না। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছি।
এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব-উল-আহসান বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি, বর্ডার হাট ও এই এলাকা দিয়ে এলসি খোলাসহ নানা বিষয়ে ইতোমধ্যে দু‘দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে বলে জেনেছি।
আশাকরি অল্প কিছু দিনের মধ্যে এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হবে। এতে সীমান্তবর্তী খেটে খাওয়া আদিবাসী শ্রমিদের দুর্দশা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।